ডেঙ্গু জ্বর কি এবং কেন হয়?

ডেঙ্গু জ্বর কি এবং কেন হয়

ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা মূলত ডেঙ্গু ভাইরাস (Dengue Virus) দ্বারা হয়ে থাকে। এটি এডিস ইজিপ্টাই (Aedes aegypti) নামক মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশাটি সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়, বিশেষ করে সকালে ও বিকেলের দিকে কামড়িয়ে থাকে। 

ডেঙ্গু-জ্বর-কি-এবং-কেন-হয়

ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন রয়েছে সেগুলো হলঃ DENV-1,  full form: Dengue Virus serotype 1 (ডেনভি-১), DENV-2, full form: Dengue Virus serotype 2 (ডেনভি-২), DENV-3, full form: Dengue Virus serotype 3  (ডেনভি-৩)  এবং DENV-4, full form: Dengue Virus serotype 4 (ডেনভি-৪)। 

ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ, অর্থাৎ সংক্রমণ ঘটে তখনই, যখন ভাইরাসে সংক্রমিত একটি এডিস মশা কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায়। এটি সরাসরি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না, শুধুমাত্র মশার মাধ্যমে ছড়ায়।

ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার প্রধানতম কারণ হলো পরিবেশে এডিস মশার বিস্তার লাভ। বিশেষ করে বর্ষাকালে এবং যেখানে পানি জমে থাকে যেমনঃ ফুলের টব, টায়ার, ছাদে পানি থাকা, ড্রাম ইত্যাদি সেখানে এডিস মশা ডিম পাড়ে এবং দ্রুত বেড়ে উঠে। অপর্যাপ্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, জনবহুল এলাকা এবং জলাবদ্ধতা ডেঙ্গু ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ায়।

সূচিপত্র

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হয়?

ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা দরকার। জ্বর ও ঘামের কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায়, ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাই ওরস্যালাইন, ডাবের পানি, লেবু পানি, ফলের রস (বিশেষ করে পেপে, বেদানা, মাল্টা, কমলার রস) ইত্যাদি খাওয়ানো উচিত।

পুষ্টিকর এবং হালকা খাবার গ্রহণ করা জরুরি। ভাত, ডাল, সবজি, স্যুপ, ডিম, খিচুড়ি ইত্যাদি খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। এগুলো শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালোরি ও পুষ্টি সরবরাহ করে। এছাড়াও পাকা পেঁপে এবং পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেট বৃদ্ধিতে অনেক বেশি কার্যকর।

ডেঙ্গু হলে লৌহ জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমনঃ ডাল, কিসমিস, কলা, আপেল, খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। কারণ রক্তে হিমোগ্লোবিন ও প্লাটিলেট পুনরুদ্ধারে এগুলো খাবার সহায়তা করে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো কি কি?

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, যা শুরুতে সাধারণ জ্বরের মতো মনে হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জটিল আকার ধারণ করতে পারে। নিচে ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান লক্ষণগুলো আলোচনা করা হলোঃ

উচ্চ মাত্রায় জ্বর 

ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো হঠাৎ করে উচ্চ মাত্রায় জ্বর (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০২-১০৪) ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর ওঠা। এই উপসর্গ গুলো সাধারণত দ্রুত (৫-১০ দিনের মধ্যে) এবং তীব্রভাবে দেখা দেয়।

মাথাব্যথা

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের প্রায়ই কপালের অংশে, মাথাব্যথা, হাত পা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে। যা জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করে।

চোখের পেছনে ব্যথা 

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের প্রায়ই চোখের পেছনে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এটি চোখ ঘোরানোর সময় আরও তীব্র হয়, যা কিছু কিছু রোগীদের জন্য অসহনীয় হতে পারে।

পেশীতে ব্যথা 

ডেঙ্গুতে মাংসপেশি ও জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে, যেমন হাতে পায়ে, গিঁটে, বা হাঁটুতে ব্যথা হতে দেখা যায়। এজন্য একে ব্রেকবোন ফিভার বা হাড় ভাঙা জ্বর ও বলা হয়ে থাকে। 

শরীরে লালচে র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি হওয়া

অনেক সময় শরীরে লাল দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়, এই ফুসকুড়ি সাধারণত ডেঙ্গু রোগীদের ২-৫ দিনে দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে হাতে-পায়ে বা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

বমি 

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বমিভাব হয় বা একাধিকবার বমি হতে পারে। ডেঙ্গু রোগীর খাদ্য গ্রহণ এবং পানি পানে অনিহা তৈরি করে যেটা শরীরের পানি শুন্যতার জন্য দায়ী।

ক্ষুধামান্দ্য ভাব

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ক্ষুধা কমে যায় এবং খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না, এটিও ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণের মধ্যে একটি।

শরীর ক্লান্তি ও দুর্বলতা

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর আরেকটি কমন লক্ষণ হলো তীব্র শারীরিক দুর্বলতা এবং ক্লান্তি ভাব অনুভব করা। এই দুর্বলতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

নাক ও মাড়ি থেকে রক্তপাত

ডেঙ্গু জ্বর যদি রক্তক্ষয়ী জ্বরে রুপান্তরিত হয় তখন রোগীর নাক, মুখ বা দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। এমনকি বমি এবং মল ত্যাগের সময়ও রক্তপাত হতে পারে।

প্লাটিলেট এর পরিমাণ কমে যাওয়া

রক্তের প্লাটিলেট সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়া ডেঙ্গুর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ। ভাইরাস সংক্রমণের কারণে রক্তে কিছু টক্সিন জাতীয় পদার্থ তৈরি হয়, যেটা প্লাটিলেট ধ্বংসের মাত্রা বাড়ায়।

এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ডেঙ্গু উপেক্ষা করলে এটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে এবং প্রাণঘাতীও হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে ডেঙ্গু থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।

ডেঙ্গু জ্বর কিভাব প্রতিরোধ করা যায়?

ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূল উপায় হলো মশার বিস্তার রোধ করা ও নিজেকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করা।

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী। বাসা ও আশেপাশে জমে থাকা পানি, যেমন ফুলের টব, পুরাতন টায়ার, ডাবের খোসা এবং খোলা পাত্রে পানি জমতে না দেওয়া। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন এসব পাত্র পরিষ্কার করে শুকিয়ে রাখা প্রয়োজন।
  • মশারি ও মশা তাড়ানোর উপকরণ ব্যবহার করা উচিত। দিনে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা জরুরি, কারণ এডিস মশা দিনে কামড়ায়। মশা তাড়ানোর ক্রিম, কয়েল, স্প্রে বা বৈদ্যুতিক ব্যাট ব্যবহার করে ঘরে মশা কমানো সম্ভব।
  • ফুল হাতা জামা-কাপড় পরিধান করা উচিত, যাতে শরীর কম খোলা থাকে। বিশেষ করে শিশুদের ফুলহাতা জামা ও লম্বা প্যান্ট পরানো বেশি উপকারী। এতে করে মশা কামড়ের ঝুঁকি কম থাকে।
  • জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক করতে হবে। ডেঙ্গুর লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে পরিবার, স্কুল, কর্মস্থল এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালানো দরকার।
  • সরকারি ও স্থানীয় প্রশাসনকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে। ড্রেন ও নালা পরিষ্কার রাখা, নিয়মিত মশা নিধন অভিযান চালানো, এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে?

ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগে জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, গাঁটে ব্যথা, ত্বকে র‍্যাশ এবং কখনো কখনো শরীরে রক্তপাতের ঝুঁকি দেখা দেয়। তবে, প্রশ্ন থাকে এই অবস্থায় গোসল করা নিরাপদ কি না?

ডেঙ্গু জ্বরে শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে, অনেক সময় তাপমাত্রা অনেক বেশি ওঠানামা করে। এক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা বিপজ্জনক হতে পারে কারণ এটি শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ কমিয়ে দিতে পারে। আবার অতিরিক্ত গরম পানিও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ তা শরীর আরও দুর্বল করে দিতে পারে।

তবে হালকা গরম বা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা যেতে পারে। গোসলের সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যেনো রোগীর ঠান্ডা না লেগে যায়।

ডেঙ্গু জ্বরে খুব সাবধানে এবং শরীরের অবস্থার উপর বিবেচনা করে গোসল করা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। 

ডেঙ্গু হলে কি ভাত খাওয়া যাবে?

ডেঙ্গু হলে ভাত খাওয়া যায় এবং এটি উপকারী। ভাত হলো একটি সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট উৎস যা শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি দিয়ে থাকে। ডেঙ্গু রোগীর শরীরে শক্তির ঘাটতি দেখা দেয় এবং দুর্বল বোধ করে। 

এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ভাত একটি উত্তম খাদ্য হতে পারে, বিশেষ করে সাদা ভাত যা হজম করতে সহজ হয় এবং অল্প রান্নাতেই নরম হয়।

তবে ভাতের সঙ্গে অবশ্যই কিছু পুষ্টিকর খাবার যেমন ডাল, সবজি বা হালকা মাছ বা মুরগির ঝোল খাওয়ানো দরকার, যেন রোগী প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও ভিটামিনও পেতে পারে। 

এ ছাড়া ভাত খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে রোগীর হজমশক্তি, ঠিক আছে কিনা। যদি রোগী বমি বমি ভাব বা পেটের গণ্ডগোলের শিকার হন, তাহলে ভাত অল্প পরিমাণে দিয়ে খাওয়ানো উচিত।

ডেঙ্গু হলে কি খাবার খেলে প্লাটিলেট কমে?

ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের রক্তে প্লাটিলেট (platelet) বা রক্ত কণিকার পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পেতে পারে, যা রোগীর জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ। এই সময় সঠিক খাদ্য নির্বাচন প্লাটিলেট স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে, আবার ভুল খাদ্য গ্রহণ করলে প্লাটিলেট আরও কমে যেতে পারে। তাই জেনে রাখা জরুরি যে ডেঙ্গু হলে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।

প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ফাস্ট ফুড যেমন বার্গার, পিৎজা, চিপস ইত্যাদি খাবার এড়ানো উচিত। এগুলোতে অতিরিক্ত ফ্যাট ও কেমিক্যাল থাকে, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং প্লাটিলেট উৎপাদনে বাধা দেয়।

অ্যালকোহল জাতীয় খাবার প্লাটিলেট গঠনে সবচেয়ে বড় বাধা সৃষ্টি করে। এটি অস্থিমজ্জার কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং রক্তের অন্যান্য উপাদানের সঙ্গেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটায়।

অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন চকলেট, ক্যান্ডি, কোমল পানীয় ইত্যাদি প্লাটিলেট হ্রাসে সহায়ক হতে পারে। এগুলোর ফলে শরীরে ইনফ্লেমেশন অর্থাৎ (জ্বালা বা প্রদাহ) এর মাত্রা বেড়ে যায়, যা প্লাটিলেট কমিয়ে দেয়।

কাঁচা বা অপরিচ্ছন্ন খাবার যেমন কাঁচা মাছ, কাঁচা মাংস বা সবজি যেগুলো সঠিকভাবে ধোয়া বা রান্না করা হয়নি তা শরীরে অতিরিক্ত সংক্রমণ তৈরি করতে পারে এবং প্লাটিলেট আরও কমে যেতে পারে।

অ্যালার্জি সৃষ্টি করে এমন খাবার যেমন দুধ, ডিম, বাদাম ইত্যাদি যদি কারও অ্যালার্জির কারণ হয়, তবে ডেঙ্গুর সময় সেগুলো এড়িয়ে চলা জরুরী। 

ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেটের পরিমাণ কত থাকে?

একজন সুস্থ মানুষের শরীরে সাধারণত প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে ১.৫ লাখ থেকে ৪.৫ লাখ পর্যন্ত প্লাটিলেট থাকে। কিন্তু ডেঙ্গু হলে শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের ফলে প্লাটিলেট ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। অনেক সময় এই পরিমাণ ১ লাখ, এমনকি ৫০ হাজারের নিচেও নেমে যায়। 

ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট কমার মূল কারণ হলো, ভাইরাসটি হাড়ের মজ্জার (Bone marrow) কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যা নতুন প্লাটিলেট তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। পাশাপাশি ইমিউনিটি প্রতিক্রিয়া ও রক্তনালীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াও প্লাটিলেট নষ্ট হওয়ার জন্য দায়ী।

ডেঙ্গুর তৃতীয় থেকে সপ্তম দিন পর্যন্ত প্লাটিলেটের পরিমাণ সবচেয়ে কমে যায়, যা “ক্রিটিকাল পিরিয়ড” হিসেবে ধরা হয়। এই সময় রোগীকে সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে গেলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, এমনকি প্রাণঘাতী অবস্থাও তৈরি হতে পারে।

তবে, প্লাটিলেট কমলেই সবসময় রক্ত দিতে হয় না। প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন (অনুচক্রিকা প্রতিস্থাপন) প্রয়োজন হয়, যখন রোগীর রক্তক্ষরণ হচ্ছে বা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় প্লাটিলেট কমে যায় তখন। তাই ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট রেট নিয়মিত পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি কি টেস্ট করতে হয়?

ডেঙ্গুর উপসর্গ সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, গাঁটে ও মাংসপেশিতে ব্যথা, চামড়ায় লালচে দাগ ইত্যাদি। এই উপসর্গগুলো ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষার প্রয়োজন হয়, যা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পরিকল্পনার জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিচে ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় গুরুত্বপূর্ণ টেস্টগুলো আলোচনা করা হলোঃ

ডেঙ্গু-জ্বর-কি-এবং-কেন-হয়

এনএস১ অ্যান্টিজেন (NS1 Antigen) টেস্ট

ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরুর ১ম থেকে ৫ম দিনের মধ্যে এই পরীক্ষা করা সবচেয়ে বেশি কার্যকর। এই টেস্টে ডেঙ্গু ভাইরাসের একটি বিশেষ প্রোটিন শনাক্ত করা হয়। দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায় এবং নিশ্চিতভাবে ডেঙ্গু আছে কি না, তা নির্ধারণে সহায়তা করে।

আইজিএম ও আইজিজি (IgM & IgG) টেস্ট

ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এই টেস্টগুলো করা হয়। IgM সাধারণত সংক্রমণের ৪-৬ দিন পর ধরা পড়ে এবং এটি নতুন সংক্রমণ নির্দেশ করে। পুরানো সংক্রমণ বোঝাতে সাহায্য করে।

আইজিজি টেস্ট মূলত একটি রক্ত ​​পরীক্ষা যা ডেঙ্গু ভাইরাসের সাথে পূর্বের সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইমিউন সিস্টেম দ্বারা উৎপাদিত অ্যান্টিবডি সনাক্ত করতে ব্যবহার হয়ে থাকে। শরীরের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জনিত বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে।

সিবিসি টেস্ট

এই পরীক্ষায় প্লাটিলেট কাউন্ট, হিমাটোক্রিট ও লিউকোসাইট কাউন্ট দেখা হয়। রক্ত কণিকা স্বাভাবিক আছে কিনা, হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা ঠিক আছে কিনা এছাড়াও ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট এর পরিমাণ কমে যায় এবং হিমাটোক্রিট এর পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার দেখা দিতে পারে শরীরে পানি জমা হওয়া, অস্থিমজ্জার সমস্যার মতো রোগও।

প্লাটিলেট কাউন্ট

ডেঙ্গুর সময় প্লাটিলেট দ্রুত কমে যেতে পারে, যা রক্তক্ষরণ বা হেমোরেজিক ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে। এটি সম্পূর্ণ রক্ত ​​​​গণনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেটি রক্তপাত বা রক্ত জমাট বাঁধার ব্যধিগুলোর ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন বা প্রয়োজনে দিনে একাধিকবার প্লাটিলেট গণনা করা যেতে পারে।

লিভার ফাংশন টেস্ট 

ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাবে লিভারর ক্ষতি হতে পারে। তাই এলএফটি (LFT) বা লিভার ফাংশন টেস্ট, এসজিপিটি (SGPT), এসজিওটি (SGOT) ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।

ক্রিয়েটিনিন টেস্ট

ডেঙ্গু সংক্রমণের সময় কিডনি কতটা ভালো কাজ করছে তা জানার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়, বিশেষ করে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে।

শেষ কথা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের প্রয়োজন সচেতনতা এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। অনেক দিনের জমে থাকা পানি অপসারণ, মশা নিধনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা, ছোট বড় সকলের ফুলহাতা জামা পরিধান করা এবং মশারি ব্যবহার এ রোগ প্রতিরোধে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে সহায়ক। সরকারি ও সামাজিক পর্যায়ে একযোগে উদ্যোগ গ্রহণ করলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url