কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
দেশি মুরগি এবং লেয়ার মুরগির ডিমের পাশপাশি এখন কোয়েল পাখির ডিম খাবারের প্রচলন তুলনা মূলক হারে বেড়েছে। মানুষের চাহিদা মেঠাতে কোয়েলের ডিম এখন খামারের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়। যার কারণে এটি এখন বেশ সহজলভ্য হয়েছে।
কোয়েল পাখির ডিম এখন পাওয়া যাচ্ছে এলাকার ছোট-বড় বাজারসহ বড় বড় সুপার শপগুলোতেও।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণঃ সম্পূর্ণ গাইড
কোয়েল পাখির ডিমের আকৃতি অনেক ছোট হলেও এতে রয়েছে অসাধারণ কিছু পুষ্টিগুণ। কোয়েলের ডিমে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, চিনি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ফলেট, ভিটামিন-এ, ভিটামিন ই, ডি, ভিটামিন বি৬, বি১২ ও কোলেস্টেরল রয়েছে| মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
কোয়েলের ডিমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা আছে, তাঁরা নিয়মিত এ ডিম খেলে উপকার পাওয়া যাবে। এতে ভিটামিন-এ রয়েছে যা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করে। ভালো রাখে চোখের দৃষ্টিশক্তি। পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় রক্তনালিকার চাপ কে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
সুচিপত্র
দিনে কয়টি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া উচিত?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তি দিনে ২ থেকে ৫টি কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারবেন। তবে প্রতিদিন না খেয়ে সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ দিন খেলে ভালো। যদি উচ্চ কোলেস্টেরল বা হৃদ্রোগের সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে চিকিৎসক অথবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে কোয়েলের ডিম খাওয়া উচিত। শিশুর বয়স যদি ২ থেকে ৪ বছর হয়, তাহলে ২ থেকে ৩ টি কোয়েল পাখির ডিম দেওয়া যেতে পারে।
তবে শুরুতে অল্প পরিমাণ দিয়ে অ্যালার্জি আছে কি না, তা বুঝে নিতে হবে। বয়স ৫ থেকে ১০ বছর হলে শিশুকে ৩টি ডিম দিতে পারেন। অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়েরা ২ থেকে ৪ টি খেতে পারেন। অতিরিক্ত কোয়েল পাখির ডিম খেলে শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রসূতি ও স্তন্যদানকারী মায়েরা ২ থেকে ৪ টি ডিম খেতে পারেন, এর বেশি না খাওয়াটাই উত্তম।
শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে বিশাল পুষ্টি গুনের ভাণ্ডার। এতে রয়েছে শিশুদের শরীরে সঠিক বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পুষ্টিগুণ। কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে হাই- প্রোটিন, যেটি শিশুদের শরীর গঠনে কার্যকর।
প্রোটিন শিশুদের পেশি, হাড়ের সঠিক গঠন ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। কোয়েলের ডিমে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি১২, ফসফরাস যা শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটাতে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এই ডিম খেলে শিশুর স্মৃতি শক্তি মেধার পর্যাপ্ত বিকাশ ঘটে।
কোয়েল পাখির ডিম দ্রুত হজম হয়, তাই শিশুর পেটে গ্যাস বা অ্যাসিডিটির ঝুঁকি কম থাকে। কোয়েলের ডিম খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় ফলে শিশুদের রক্ত শুন্যতা প্রতিরোধ করে। এই ডিমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় শিশুদের ত্বকের উজ্জলতা ও চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করে।
একটা কোয়েল পাখির ডিমে কত গ্রাম প্রোটিন থাকে?
কোয়েল পাখির ডিম পুষ্টিগুণে অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি খাদ্য, বিশেষ করে প্রোটিনের উৎস হিসেবে। সাধারণত একটি কোয়েল ডিমের গড় ওজন প্রায় ৯ থেকে ১২ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রোটিনের মাত্রাও বেশি পরিমাণে থাকে, যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি।
একটি কোয়েল পাখির ডিমে (৮-১০ গ্রাম) আনুমানিক ১.২ থেকে ১.৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। যদিও ডিমের আকার এবং প্রাকৃতিক কারণে সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে।
প্রোটিন আমাদের শরীরের মাংসপেশি এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু মাংসপেশীর জন্য নয়, বরং ত্বক, নখ এবং চুলের গঠনে ও বিশেষ ভূমিকা রাখে।
প্রোটিন হরমোন ও এনজাইমের স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যাবলী সঠিকভাবে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। কোয়েল ডিমের প্রোটিন অত্যন্ত সহজে হজম হয় এবং এতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা শরীরের জন্য অপরিহার্য।
এই কারণে, কোয়েল ডিম বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য খুবই উপকারী। সাধারণত যারা প্রোটিনের ভালো উৎস খুঁজছেন, তারা কোয়েল ডিম খেতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি সাধারণ মুরগির ডিমের তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টিকর।
কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম
কোয়েল পাখির ডিম পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য। তবে এটি সঠিকভাবে খাওয়া ও গ্রহণ করার কিছু নিয়ম আছে, যাতে এর উপকারিতা পুরোপুরি পাওয়া যায় এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয়।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমাণ মাফিক ডিম নির্ধারণ করা জরুরি। প্রাপ্তবয়স্ক একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ টি কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন। শিশুদের খেত্রে ১-২ টি ডিম যথেষ্ট। অতিরিক্ত ডিম খেলে হজম ক্রিয়ায় সমস্যা বা এলার্জীর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
খালি পেটে ডিম খাওয়া উপকারী, বিশেষ করে সকাল বেলায়। খালি পেটে কোয়েল ডিম খেলে এটি শরীরে সহজে শোষণ করে নিতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। অনেক বিশেষজ্ঞ কাঁচা খাওয়ার পরামর্শ দিলেও, হালকা সিদ্ধ করে খাওয়াই স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ বলে মনে করে।
ডিমের বেশি উপকারিতা পেতে কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার। যেমন, কাঁচা ডিম খেতে হলে তার সঙ্গে লেবু পানি অথবা মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
ডিম সংরক্ষণের নিয়ম মেনে চলতে হবে। ফ্রিজে সংরক্ষিত করা কোয়েলের ডিম ৮ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মায়ের পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুর সুস্থ বৃদ্ধির জন্য জরুরি। কোয়েল পাখির ডিম এক্ষেত্রে একটি উপকারী ও পুষ্টিগুণে ভরপুর খাদ্য, যা গর্ভবতী নারীর জন্য অনেক ধরনের উপকারে আসে।
কোয়েলের ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা গর্ভের শিশুর কোষ গঠন ও টিস্যুর বিকাশে সাহায্য করে। প্রোটিনমায়ের দেহে প্রয়োজনীয় হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
এতে থাকা আয়রন রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে কার্যকর, যা গর্ভাবস্থায় খুব সাধারণ সমস্যা। পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে এবং শিশুর পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে।
কোয়েলের ডিমে রয়েছে ভিটামিন A, ভিটামিন B12, ভিটামিন D এবং ফলি্ক এসিড থাকে, যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম মায়ের হাড় মজবুত করে এবং শিশুর হাড় ও স্বাস্থ্যকর দাঁত গঠনে সহায়ক।
কোয়েল পাখির ডিম পাড়ার লক্ষণ কী কী?
কোয়েল পাখির ডিম পাড়ার লক্ষণগুলি বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে সময়মতো ডিম সংগ্রহ করা যায় এবং কোয়েল পাখির স্বাস্থ্যও ভালো থাকতে ভূমিকা রাখে। সাধারণত কোয়েল পাখির ডিম পাড়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে কিছু স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায়।
কোয়েল পাখির ডিম পাড়ার সময় তাদের শরীরের আকৃতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়। ডিম পাড়ার আগে কোয়েলের তলপেট ফুলে ওঠে এবং একটু বড় মনে হয়। পাখিটির পেটের নীচের অংশ কিছুটা নরম হয়ে যায় এবং প্রসারিত হয়। এটি দেখতে পেলে বুঝতে হবে কোয়েল পাখি ডিম পাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কোয়েল সাধারণত বেশি চঞ্চল হয়ে ওঠে। ডিম পাড়ার পূর্বে তাদের খাদ্যাভ্যাস বদলে যেতে পারে; অনেক ক্ষেত্রে তারা বেশি বেশি খাওয়া শুরু করে দেয়, কারণ ডিম তৈরির সময় তাদের বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়।
কোয়েল ডিম পাড়ার আগে ক্লান্ত ভাব এবং ঘুমের পরিমাণ বেড়ে যায়। কারণ ডিম গঠনের সময় তাদের শরীর বেশি শক্তি খরচ করে।
ডিম পাড়ার সময় কোয়েল পাখির গলার কণ্ঠ পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু কোয়েল ডিম পাড়ার সময় আস্তে আস্তে ডেকে থাকে, আবার কিছু সময় একটু বেশি আওয়াজ করে ডাকে। এই ডাকের ভিন্নতা প্রকাশ পেলে বুঝতে হবে যে কোয়েলের ডিম পাড়ার সময় শুরু হয়ে এসেছে।
এক হালি কোয়েল পাখির ডিমের দাম কত?
বর্তমানে ২০২৫ সালের বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী, ১ হালি কোয়েল পাখির ডিমের দাম প্রায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা হতে পারে।
তবে, এই দাম স্থান, সময় এবং বিক্রেতার উপর নির্ভর করে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু সাধারণত এই পরিসীমার মধ্যে থাকে।
১ হালি কোয়েল পাখির ডিমের দাম বাজার অনুযায়ী ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। তবে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে কোয়েল ডিমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভবিষ্যতে এর দাম কিছুটা বাড়তেও পারে। তাই যারা কোয়েল ডিম খেতে আগ্রহী, তাদের উচিত বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ বাজার থেকে ডিম কেনা এবং দাম সম্পর্কে সজাগ থাকা।
সবশেষে বলা যায়
কোয়েল পাখির ডিমকে পুষ্টির দিক থেকে বিশেষভাবে উপকারী খাবার হিসেবে দেখা হয়। যদিও এটি আকারে ছোট, কিন্তু এর পুষ্টিগুণের ভাণ্ডার অসাধারণ।
কোয়েলের ডিমে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন, খনিজ উপাদান, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। এই উপাদানগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, হাড় এবং পেশি শক্তিশালী করতে এবং শিশুদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url