ডেঙ্গু জ্বরের বাহক কোন মশা

ডেঙ্গু জ্বরঃ লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার, চিকিৎসা ও দোয়া

ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা প্রধানত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। বিশেষত, এডিস এজিপ্টি প্রজাতির মশা ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক হিসেবে পরিচিত। এই মশাটি সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ে, বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে ১১টা এবং বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে।

ডেঙ্গু-জ্বরের-বাহক-কোন-মশা

এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার ও স্থির পানিতে বংশবিস্তার করে। যেমন, ফুলের টব, নারিকেলের খোসা, ব্যবহৃত টায়ার, পানির ড্রাম, পলিথিন, অথবা এসির নিচে জমে থাকা পানি ইত্যাদি। তাই বাড়ির ভিতরে বা আশেপাশে জমে থাকা পরিষ্কার পানি এই মশার জন্য প্রধান প্রজনন স্থান।

যখন এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমিত হয়, তখন তার দংশনের মাধ্যমে মানুষ আক্রান্ত হয়। ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে থাকে এবং সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে মশাটি ভাইরাসটি গ্রহণ করে। 

এরপর পরবর্তী ৮-১২ দিনের মধ্যে এই ভাইরাসটি মশার শরীরে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে, যখন এই মশাটি অন্য কাউকে কামড়ায়, তখন তার শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস সঞ্চারিত হয়।

সুচিপত্র

ডেঙ্গু জ্বরের দোয়া

ডেঙ্গু জ্বর থেকে আরোগ্য লাভের জন্য দোয়াঃ

১. রোগ মুক্তির দোয়াঃ

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ، أَذْهِبِ الْبَأْسَ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণঃ

“আল্লাহুম্মা রাব্বান্ নাস, আযহিবিল বাত্‌সা, ইশ্‌ফি, আন্তাশ্‌ শাফি, লা শিফা’আ ইল্লা শিফাউক, শিফা’আন লা ইউগাদিরু সাকামান।”

বাংলা অর্থঃ

হে মানুষের প্রতিপালক আল্লাহ! আপনি কষ্ট দূর করে দিন। আপনি হলেন একমাত্র আরোগ্যদানকারী। আপনার আরোগ্য ব্যতীত অন্য কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দিন যা কোনো ব্যাধি অবশিষ্ট রাখে না।

২. ডেঙ্গু বা অন্য যে কোনো জ্বরে আক্রান্ত হলে পড়ার জন্যঃ

দোয়াঃ

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

উচ্চারণঃ

“বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়াদুররু মা'আ স্মিহি শাইউন ফিল আরদি ওলা ফিস্‌সামা-ই, ও হুয়াস্‌ সামীউল আলীম।”

বাংলা অর্থঃ

আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।

ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের নাম কি

ডেঙ্গু জ্বরের মূল কারণ হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস, যা বৈজ্ঞানিকভাবে DENV নামে পরিচিত। এই ভাইরাসটি Flaviviridae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং Flavivirus গোষ্ঠীর একটি সদস্য। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি প্রধান সেরোটাইপ রয়েছে  DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4। 

প্রতিটি সেরোটাইপ মানব দেহে ডেঙ্গু জ্বর সৃষ্টি করতে সক্ষম, এবং যদি কেউ একাধিক বার সংক্রমিত হয়, তবে জটিলতার সম্ভাবনা বাড়ে।

এই ভাইরাসটি প্রাথমিকভাবে এডিস ইজিপটি নামে পরিচিত স্ত্রী মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই মশাগুলি বিশেষ করে দিনের বেলায়, বিশেষত সকালে এবং বিকেলে বেশি সক্রিয় থাকে। 

ডেঙ্গু ভাইরাস রক্তে প্রবেশ করার পর শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে লড়াই শুরু করে, যার ফলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন উচ্চ তাপ অনুভব করা, চোখের পিছনে ব্যথা হওয়া, শরীর ব্যথা, ত্বকে র‍্যাশ এবং বমি।

যদি একজন ব্যক্তি DENV-1 দ্বারা আক্রান্ত হন, তাহলে তার শরীরে ওই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হয়। 

কিন্তু অন্য সেরোটাইপ দ্বারা আক্রান্ত হলে ডেঙ্গুর জটিল রূপ তৈরি হতে পারে, যেমন ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম, যা কখনও কখনও প্রাণঘাতী হতে পারে

ডেঙ্গু জ্বর কিভাবে ছড়ায়

ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট রোগ, যা প্রধানত এডিস ইজিপটি এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস নামে পরিচিত মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশাগুলি সাধারণত সকালে এবং সন্ধ্যায় বেশি সক্রিয় থাকে, এবং তাদের কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে।

যখন একজন ডেঙ্গুর দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের পরীক্ষা করা হয়, তখন সেই মশাটি সংক্রমিত হয়ে যায়। 

পরবর্তী সময়ে, যদি সেই মশাটি অন্য একটি সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায়, তাহলে ডেঙ্গু ভাইরাস তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। 

এভাবে একজনের দেহ থেকে অপরের মধ্যে ভাইরাসটির সঞ্চালন ঘটে, তবে এটি সরাসরি এক ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয় না; বরং মশার মাধ্যমে ঘটে।

এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার জমে থাকা পানিতে জন্ম নেয়, যেমনঃ ফুলদানি, পানির ট্যাঙ্ক, বালতি, পরিত্যক্ত টায়ার এবং অন্যান্য জিনিসে জমে থাকা পানি। 

গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে বৃষ্টির ফলে চারপাশে পানি জমে থাকার কারণে এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধি পায় এবং ডেঙ্গু সংক্রমণের হারও বেড়ে যায়।

ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধ করতে সচেতনতা অত্যন্ত প্রয়োজন। জমে থাকা পানি দ্রুত পরিস্কার করতে হবে, ফুলদানির পানি নিয়মিতভাবে পরিবর্তন করতে হবে এবং মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে ফুল হাতা জামা ছোট বড় উভয়ের ব্যবহার করা ও মশার প্রতিরোধক ব্যবহার করা জরুরি।

ডেঙ্গু জ্বর হলে রক্তের কোন উপাদান কমে যায়

ডেঙ্গু জ্বর হলে মূলত রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যাকে প্লেটলেট (Platelet) বলা হয়, তার অভাব দেখা দেয়। বাংলায় এর নাম “রক্ত কণিকা” বা “অণুচক্রিকা”। 

এই প্লেটলেট রক্তের জমাট বাঁধাতে সাহায্য করে এবং শরীরের রক্তপাত রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

সাধারণত, একজন মানুষের রক্তে প্রতি মাইক্রোলিটারে ১,৫০,০০০ থেকে ৪,৫০,০০০ প্লেটলেট থাকার কথা। কিন্তু ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে এই সংখ্যা দ্রুত কমতে পারে, যা রক্তপাতের জটিলতা তৈরি করে।

ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে যায় এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে। এর ফলে রক্তনালী দুর্বল হয়ে পড়ে এবং প্লেটলেট ধ্বংস হতে শুরু করে। 

পাশাপাশি প্লেটলেট তৈরির হারও কমে যায়, ফলে রক্তে এর সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। যখন প্লেটলেটের সংখ্যা ১,০০,০০০ এর নিচে নেমে যায়, তখন তা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

বিশেষ করে, যদি এটি ২০,০০০ এর নিচে চলে যায়, তাহলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

প্লেটলেটের অভাবের কিছু লক্ষণ হলো, হঠাৎ নাসিকা, মাড়ি বা মলদ্বার থেকে রক্তপাত, শরীরে নীল দাগ হওয়া, অতিরিক্ত দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি। 

তাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে প্লেটলেটের পরিমাণ নিরীক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। 

চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সঠিক চিকিৎসা নিলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। কখনও কখনও প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন বা রক্তে প্লেটলেট সরবরাহের প্রয়োজনও হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর কত প্রকার?

ডেঙ্গু জ্বর চারটি আলাদা ভাইরাস দ্বারা হয় DENV-1, DENV-2, DENV-3 এবং DENV-4। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়। যেমনঃ

  • সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর (Classic Dengue Fever) হল ডেঙ্গুর প্রাথমিক ও তুলনামূলকভাবে হালকা রূপ। এই অবস্থায় রোগীরা জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, পেশী ও জোড়ায় ব্যথা, দুর্বলতা এবং মাঝে মাঝে গায়ে লালচে র‍্যাশের মতো উপসর্গ অনুভব করে। সাধারণত, এটি ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সেরে যায় এবং যথাযথ বিশ্রাম ও তরল খাদ্য গ্রহণ করলে জটিলতা দেখা দেয় না।

  • ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (Dengue Hemorrhagic Fever DHF) একটি গুরুতর ধরনের ডেঙ্গু। এতে রক্তনালীর প্রাচীর দুর্বল হয়ে রক্তপাত শুরু হতে পারে। রোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল দাগ, নাক বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, বমি এবং পেটে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। প্লেটলেটের সংখ্যা দ্রুত কমে যেতে পারে, ফলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

  • ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (Dengue Shock Syndrome DSS) হল ডেঙ্গুর সবচেয়ে মারাত্মক রূপ। এই অবস্থায় শরীরে তরল পদার্থের অভাব দেখা দেয় এবং রক্তচাপ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রোগী শকে চলে যেতে পারে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের  বেঁকে যাওয়া/বিকল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত হাসপাতলে ভর্তি হওয়া এবং বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

ডেঙ্গু মশা কখন কামড়ায়

ডেঙ্গু মশা সাধারণত দিনে কামড়ায়, বিশেষ করে সকাল এবং সন্ধ্যার সময়। এরা ফজরের প্রথম আলো উঠার পরে থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। এই সময়ের মধ্যে, ডেঙ্গু বাহক এডিস ইজিপটি মশার কামড়ের সংখ্যা বেড়ে যায়। গভীর রাতে এদের কামড়ানোর প্রবণতা থাকে খুব কম।

ডেঙ্গু মশার কামড় সাধারণত পায়ের, হাতের এবং শরীরের নিচের অংশে হয়, কারণ এরা অপেক্ষাকৃত কাছ থেকে শিকার করে। দিনের বেলাতে বেশি সক্রিয় থাকায় এরা ছাদ, জানালা, গাছপালা এবং বাড়ির আশেপাশের ছায়াযুক্ত স্থানে বাসা বেঁধে থাকে। 

ডেঙ্গু মশা গন্ধ ও মানুষের নিঃশ্বাসে আকৃষ্ট হয়ে কামড় দেয়। কামড়ানোর সময় শরীরের মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রবেশ করে, যা ডেঙ্গু জ্বর সৃষ্টি করে। তাই, ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে দিনের বেলা, বিশেষ করে সকালে ও সন্ধ্যায় বাইরে যাওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত।

ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে বাঁচতে, দিনে দীর্ঘ হাত জামা পরা, মশারি ব্যবহার করা এবং মশা প্রতিরোধক তেল ব্যবহার করা। এছাড়া, বাড়ির আশেপাশে পানি জমে থাকা এড়াতে হবে যাতে মশার প্রজনন বেড়ে উঠতে না পারে।

ডেঙ্গু মশার দিনে কামড়ানো তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যা অন্য মশাদের থেকে একদম আলাদা । তাই সচেতনতা ও প্রতিরোধের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।

ডেঙ্গু মশা কামড়ালে করণীয়

ডেঙ্গু মশা কামড়ালে দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা জীবনহানিকর হতে পারে। প্রথমাবস্থায় কামড়ের স্থান দেখে নিন; যদি সেখানে অতিরিক্ত লালচে বা ফুলে যায়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মশা কামড়ানোর পর ঘাম মুছে ফেলুন এবং আক্রান্ত স্থানে ঠাণ্ডা পানির তুলো বা বরফ সেঁক দিতে পারেন, এতে করে জ্বালা বা জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করবে। কামড়ানো স্থানে গরম পানি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। 

হাত ও মুখ ধোয়া এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি, আর যদি কামড়ানোর স্থানে কোনো অ্যালার্জির লক্ষণ যেমন ফুসকুড়ি বা অস্বাভাবিক ফোলা দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ যেমন হঠাৎ উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা, মাংসপেশী ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, বমি ভাব, এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষরণের শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন। 

নিজে থেকেই কোনো অ্যান্টিবায়োটিক বা পেনকিলার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ ডেঙ্গুতে কিছু ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন রক্ত পাতলা করে এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

মশা প্রতিরোধে পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, পানি জমতে না দেওয়া, মশারি বা পোশাক ব্যবহার করা, এবং মশার তেল ব্যবহার করা উচিত। 

ডেঙ্গু মশার কামড়ের পর দ্রুত সতর্কতা ও সঠিক চিকিৎসা নিলে জটিলতা কমে যায় এবং দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডেঙ্গু জ্বর, যা ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয়, এক ধরনের সংক্রামক জ্বর। এটি সাধারণত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যখন কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তখন সাধারণত ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।

উচ্চ জ্বরের সাথে শুরু হয়, যা হঠাৎ করে আসে। তারপর মাথা, শিরদাঁড়া এবং পেশীতে তীব্র ব্যথা অনুভব হতে পারে। 

চোখের পেছনে ব্যথা, ত্বকে ফুসকুড়ি, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, খাবার না পচা এবং ক্লান্তির অভিজ্ঞতা হতে পারে। অনেক সময় নাক বা মলদ্বার থেকেও রক্তপাত হতে দেখা যায়।

কিছু ক্ষেত্রে প্লেটলেট বা রক্তের উপাদান কমে যাওয়ার কারণে রক্তপাতের ঝুঁকি তৈরি হয়, যা ডেঙ্গুর অন্যতম প্রধান জটিলতা। 

ডেঙ্গুর চিকিৎসায় বিশেষ কোনো ওষুধ নেই, তাই উপসর্গগুলো হ্রাস করা এবং উপযুক্ত চিকিৎসা প্রয়োজন।

বিশেষ করে বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন। তবে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ এড়ানো উচিৎ, কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

রোগীর যথেষ্ট পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া উচিত এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে নিয়মিত পানি পান করাতে হবে। 

প্লেটলেট কমে গেলে এবং গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে  যেতে হবে। ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা করা হয়, যা ভাইরাস বা অ্যান্টিবডি শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মশার থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মশারি ব্যবহার করা, মশা মারার স্প্রে প্রয়োগ করা এবং পোকামাকড়ের আশে পাশে পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন।

সর্বশেষে বলা যায় যে

ডেঙ্গু জ্বরের বিরুদ্ধে সচেতন থাকা এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

যেহেতু ডেঙ্গুর জন্য কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই, তাই আমাদের মূল কাজ হবে এডিস মশার বিস্তার প্রতিরোধ করা।

বাসা-বাড়ি ও আশে পাশের পরিবেশকে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে, জমে  থাকা পানি ফেলে দিতে হবে, ফুলদানির পানিও প্রতিদিন পাল্টাতে হবে এবং এসির নিচে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করে নেওয়া জরুরী।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url