গরমে ডাবের পানির উপকারিতা

গরমে ডাবের পানির উপকারিতা কেন খুব জরুরি

গরমে ডাবের পানি একটি স্বাস্থ্যকর এবং প্রাকৃতিক পানীয় হিসাবে বিবেচিত। এতে ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে, যা শরীরকে সতেজ ও ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। 

অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে পানি ও ইলেকট্রোলাইটের অভাব দেখা দেয়, যা ডাবের পানি পান করলে সহজেই পূরণ হয়, ফলে ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা কমে যায়। 

গরমে-ডাবের-পানির-উপকারিতা

এই পানিটি হজমের উন্নতি ঘটায় এবং বদহজম ও অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া, ডাবের পানি ত্বককে রক্ষা করে, এটি মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে এবং রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখে। 

এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবেও কাজ করে, যা কিডনিকে পরিষ্কার করতে ও শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে। তাই গরমের সময় নিয়মিত ডাবের পানি পান করা এক অত্যন্ত জরুরি ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।

ডাবের পানি গরম করে খেলে কি হয়?

গরমে শরীর থেকে খুব তাড়াতাড়ি পানি শোষন করে নেয়। ফলে শরীরে দেখা ডি হাইড্রেশনের মতো ঝুঁকি। ডাবের পানি একটি পুষ্টি গুণে ভরপুর একটি ফল, যা সারা বছরই আমাদের দেশের সব এলাকাতেই খুব সহজে আমরা কিনে খেতে পারি। ডাবের পানি আমাদের শরীরে পানি শুন্যতার ঘাটতি পূরণ করে।

পুষ্টি বিদরা বলেছেন, ডাবের পানিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও জিংক রয়েছে। যা গরমে প্রতিদিন নিয়ম করে পান করা উচিত।

ডাবের পানি হজম শক্তি বৃদ্ধি তে সহায়ক। মানব শরীরের ত্বকের তৈলাক্ত ভাব এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

গরমে মুত্র থলি ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়, আর এ সমস্যায় ডাবের পানি বিশেষ কার্যকরী একটি পানীয়।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল ভিটামিন সি, যেটি ডাবের পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ডাবের পানির গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও স্বাস্থ্যকর পেশি গঠনে সাহায্য করে, কারণ, এই পানিতে রয়েছে পটাশিয়াম এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু খনিজও উপাদান।  

এক কাপ পরিমাণ ডাবের পানিতে প্রায় ৪০০ মিলি গ্রাম পটাশিয়াম থাকে। যা কলার একই পরিমাণে বিদ্যমান। নিয়মিত ডাবের পানি পানে উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে। 

সুচিপত্র

ডাবের পানি কি কিডনির ক্ষতি করে?

ডাবের পানি একটি প্রাকৃতিক পানীয় যা গ্রীষ্মকালে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি ভিটামিন, খনিজ, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারে আসে। কিন্তু অনেকেই জানতে চান, ডাবের জল কি কিডনির জন্য ক্ষতিকারক? আসুন জেনে নেওয়া যাকঃ

ডাবের পানি সাধারনত কিডনির জন্য অনিরাপদ নয়। এই পানীয় প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। এতে থাকা পটাসিয়াম কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। 

তবে কিডনির সমস্যা হলে বা কিডনি কাজে ব্যর্থতার শিকার হলে পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি, কারণ অতিরিক্ত পটাসিয়াম শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিডনির অসুস্থ রোগীদের জন্য ডাবের পানি পান করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ ডাবের পানি থেকে বেশি পটাসিয়াম আসতে পারে, যা কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ডাবের কি কি অপকারিতা রয়েছে?

ডাব একটি প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর পানীয় হলেও এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে, যা থেকে হতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক, যদি সচেতন না হওয়া যায়। 

ডাবের পানি অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভোগছেন তাদের জন্য এটি গুরুতর বিপদ ডেকে আনতে পারে। 

ডাবের মধ্যে প্রাকৃতিক মিষ্টতার উপস্থিতির কারণে, বেশি পান করলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়তে পারে, যা ডায়াবেটিকদের জন্য সমস্যার কারন হতে পারে। 

ডাবের পানি প্রায়শই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ঠাণ্ডা হয়ে থাকে, যা গলাবাত বা ঠাণ্ডা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি সৃষ্টি করতে পারে। তাপমাত্রার পরিবর্তনের সময় ডাবের অতিরিক্ত ব্যবহারে গলাবাত, কাশি, গলাব্যথা ইত্যাদির মতো শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা তীব্র হতে পারে। 

 ডাবের পানিতে কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যারা ফল বা নারকেলপ্রতি অ্যালার্জি আক্রান্ত, তাদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে। যদি অ্যালার্জি থাকে তবে ডাবের পানির ব্যবহারে চুলকানি, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা

গর্ভধারণের সময় ডাবের পানি পান করা গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি একটি প্রাকৃতিক এবং পুষ্টিকর তরল যা শরীরের জলমাত্রা পূরণ করে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। 

ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রোলাইট, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, এবং ভিটামিন সি বিদ্যামান, যা মাতা ও গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক।

গর্ভধারণের সময় ডাবের জল পান করলে শরীরের জলসঞ্চয় ঠিকভাবে বজায় থাকে এবং স্বাভাবিকভাবে শক্তি বাড়ায়। এতে উপস্থিত ইলেকট্রোলাইট যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম মাতা ও গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক কোষে পুষ্টির যোগান দেয়। এটি শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে এবং ক্লান্তি ভাব কমায়, যা গর্ভাবস্থায় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।  

গর্ভাবস্থায় মায়েরা মাঝে মাঝে বমির প্রবণতা বেশি অনুভব করেন এবং এসিডিটির সমস্যা ব্যাপক হারে  বৃদ্ধি পায়। 

ডাবের পানি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিডের মতো কাজ করে, অন্ত্রের এসিডিটি কমাতে সহায়তা করে এবং বমির অনুভূতি নিরাময় করে। এটি সহজে হজম হয় এবং পেটের অস্বস্তি কমায় । 

ডাবের জল কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কারণ এটি প্রস্রাবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরের অযাচিত পদার্থগুলি অপসারণ করে। গর্ভাবস্থায় মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, যা প্রতিরোধ করতে এটি দারুণ কার্যকর। 

এছাড়া, এটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সহায়তা করে, যা গর্ভাবস্থায় একটি প্রচলিত সমস্যা। নিয়মিত ডাবের জল পান করলে প্রাণশক্তি বাড়ে এবং অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকলাপ সঠিক থাকে। এর ফলে মায়ের মধ্যে স্বস্তির অনুভূতি সৃষ্টি হয়।

 ডাবের জলে উপস্থিত পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা প্রি-একলাম্পসিয়া প্রতিহত করে। এটি শরীরের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সতেজ রাখে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। 

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থার সময় ডাবের পানি পান করা সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ । এটি একটি প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট পানিয় যা কিনা শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি জমে রাখতে সাহায্য করে। গর্ভবতী মায়েদের দেহে প্রায়ই পানির অভাব, বমি ভাব বা বমি, এসিডিটি ও বদ হজমের সমস্যা দেখা দেয়। এইসব সমস্যার সমাধানে ডাবের পানি একটি আদর্শ খাবার বা পানীয়। 

ডাবের পানির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ভিটামিন সি রয়েছে, যা শরীরকে দ্রুত শক্তি প্রদান করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

এটি পেশাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন  বের করে দেয় এবং কিডনিকে  শক্তিশালী করে তুলে । ডাবের পানি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও দ্রুত হজমে সাহায্য  করে। 

গর্ভাবস্থায় প্রতিটি নারীর শারীরিক পরিস্থিতি আলাদা আলাদা হয়ে থাকে, তাই ডাবের পানি পান করার আগে একজন বিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যাদের গ্লুকোজ লেভেল বেশি বা কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য সীমিত পরিমাণে ডাবের পানি খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। 

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বা বিকেলে ডাবের পানি পান করা সবচেয়ে মানব শরীরের জন্য উপকারী। কিন্ত কখনোই বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত ডাবের পানি শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বিঘ্নিত ঘ টা তে পারে। 

ডাবের পানিতে কোন কোন ভিটামিন রয়েছে?

ডাবের পানি প্রকৃতিগতভাবে ভিটামিন ও খনিজে সমৃদ্ধ একটি পানীয়। এটি গরমকালে শরীরকে শীতল রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি প্রদান করে। ডাবের জলে মূলত যে ভিটামিনগুলো বিদ্যমান, সেগুলো হলোঃ

১. ডাবের পানি প্রাকৃতিক এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি পানীয়, যা মানব শরীরের ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে। ডাবের পানিতে রয়েছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়াম,  বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন কে এবং কিছু পরিমাণে ভিটামিন এ, যা শরীরের জন্য উপকারী। বিশেষ করে গরমে ডাবের পানি শরীরকে  ঠাণ্ডা  রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 

২. ডাবের পানির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন হলো ভিটামিন সি, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন রকমের সংক্রমণ থেকে শরীর কে রক্ষা করে। এটি ত্বকের স্বাস্থ্য উজ্জল করতে কার্যকরি, এবং কোলাজেন তৈরি করতে সহায়তা করে, যা ত্বককে মসৃণ ও সুন্দর রাখে।

৩. ডাবে পানি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রয়েছে যা শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ফোলেট ব্রেন ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য  করে। এসব ভিটামিন  শক্তি উৎপাদন বাড়ায় ক্লান্তি দূর করে ও শরীরকে সতেজ রাখে। ডাবের পানিতে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শরীরের কোষগুলোকে কার্যকরভাবে কাজ করার সক্ষমতা এনে দেয়, ফলে স্বাস্থ্যর উন্নতি ঘটে।

৪. ডাবের পানিতে ভিটামিন কে বিদ্যমান, যা রক্ত জমাট বাঁধতে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের ক্ষতস্থান থেকে দ্রুত রক্তক্ষরণ বন্ধ করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন কে শরীরের রক্তনালী সুস্থ রাখে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তাই ডাবের পানিতে ভিটামিন কে থাকার কারণে এটি শরীরের জন্য বিশেষ ভাবে ফলদায়ক।

৫. ডাবের পানিতে সামান্য পরিমাণে ভিটামিন এ বিদ্যমান রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্য ও ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় অপরিহার্য। সঠিক পরিমাণে ভিটামিন এ থাকার কারনে  চোখের দৃষ্টি শক্তি বজায় থাকে এবং রাতের আধারেও ভালো দৃষ্টি পাওয়া যায়। এটি ত্বকের কোষগুলোকে উজ্জল করে এবং ত্বককে সুস্থ রাখে। সব মিলিয়ে, ডাবের জল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

ডাবের জল কখন খাওয়া উচিত?

ডাবের পানি গ্রহণের সঠিক সময়  সম্পর্কে অনেকেই বিশেষ ভাবে আগ্রহী, কারণ ডাবের পানি স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর তরল পানীয়। গরমের সময় ডাবের পানি শরীরকে ঠান্ডা করে এবং বিভিন্ন পুষ্টিগত উপকার অর্জন করতে বিশেষভাবে কার্যকর। এরপরও, ডাবের পানি পান করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।

সকালে খালি পেটে ডাবের পানি পান করা অত্যন্ত উপকারী। খালি পেটে ডাবের পানি পান করলে শরীরের পানির ঘাটতি দূর হয় এবং শরীর দ্রুত শক্তি অর্জন করে। এতে শরীরের ক্ষতিকর উপাদানগুলো বের হয়ে আসে এবং খাবার দ্রুত  হজম হতে সাহায্য করে। 

পাশাপাশি সকালে ডাবের পানি পানে শরীরে প্রাকৃতিক ভাবে  ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সরবরাহ করে, যা সারাদিনের জন্য শক্তির যোগান দেয়।

গ্রীষ্মকালে যেকোন মুহূর্তে ডাবের পানি পান করা যেতে পারে, বিশেষ করে মধ্যাহ্ন কিংবা বিকাল বেলায় যেদিন শরীরে অধিক পরিমাণে ঘামের সম্মুখীন হয় এবং পানির অভাব অনুভব করে। এর ফলে শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং পানিশূন্যতার সম্ভাবনা কমে যায়। 

ডাবের পানি পান করার পর ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট এর  মধ্যে ভারী খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যাতে হজমে কোনো বাঁধা সৃষ্টি না হয়। রাতে ঘুমানোর আগে ডাবের পানি পান করা উচিত, কারণ রাতে অতিরিক্ত পানি করলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। 

ডাবের পানি কতক্ষন ভালো থাকে

ডাবের পানি একটি প্রাকৃতিক তরল পানীয় যা শরীরের জলসামগ্রী বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং প্রচুর  পরিমাণে  পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে যদি সংরক্ষণের সময় কিছু নিয়ম অনুসরণ না করা হয়, তাহলে এটি দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

সাধারণভাবে, ডাব কাটা হলে এর ঘরের তাপমাত্রায় ১-২ ঘণ্টা অবধি ভালো থাকে। এরপর এটি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি শুরু করে এবং স্বাদ ও গুণগত মান খারাপ হতে থাকে।

যদি ডাবের পানি কাটার সাথে সাথে ফ্রিজে রাখা হয়, তাহলে এটি ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকে। তবে অবশ্যই এটি ঢেকে রাখতে হবে এবং দুর্গন্ধযুক্ত খাবারের পাশেও রাখা উচিত নয়। কারণ ডাবের পানি খুব দ্রুত গন্ধ শোষণ করে নেয় । 

ফ্রিজে সংরক্ষণের সময় কাঁচের বা স্টেইনলেস স্টিলের পাত্র ব্যবহার  করা ভালো , প্লাস্টিকের পাত্রে ডাবের পানি রাখলে  স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

অনেকে মনে করেন যে, ডাবের পানি  ফ্রিজে রেখে ২-৩ দিন পর্যন্ত পান করা যায় । কিন্তু এটি অনেক  স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। 

তবে যদি আপনি ডাবের পানি অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে এটি বোতলজাত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা উচিত। এই প্রক্রিয়ার  মাধ্যমে ডাবের পানি  ৬-৭ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব।

ডাবের পানি কি ফ্রিজে রাখা যায়?

ডাবের পানি একটি প্রাকৃতিক ও তাজা পানীয়, যা গরমের সময়  শরীরকে সতেজ রাখে এবং  অধিক পুষ্টির যোগান দেয়। এতে পুষ্টিকর পানি , ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে, ডাবের পানি সংরক্ষণ করার কিছু বিষয় খেয়ালে রাখা জরুরি।

ডাবের পানি সুরক্ষিত করতে হলে এটি অবশ্যই একটি পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখতে হবে। ফ্রিজে ডাবের জল সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সতেজ থাকে। ফ্রিজে থাকার সময় ডাবের জল ঠাণ্ডা থাকায় ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়, ফলে পানির গুণগত মান কিছু সময়ের জন্য স্থিতিশীল থাকে। তবে, অধিক সময় ফ্রিজে রাখলে ডাবের জলের স্বাদ ও গুণে পরিবর্তন ঘটতে পারে।

ডাবের পানি ফ্রিজে রাখার আগে একটি পরিষ্কার পাত্র বা সিল করা বোতলে সংরক্ষণ করা উচিত। পাত্র বা বোতলে  খোলা মুখে ফ্রিজে রাখলে পানি অকারণে বাতাসের সংস্পর্শে এসে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই, ভাল মানের একটি প্লাস্টিক বা কাচের বোতল ব্যবহার করা প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, ডাবের পানি ফ্রিজে সংরক্ষণ করার পর সেটি অবশ্যই ঠাণ্ডা অবস্থায় পান করা জরুরি, কারণ উষ্ণ অবস্থায় রেখে দিলে তা দ্রুত পচনশীল হয়ে যায়। ফ্রিজে রাখা নারিকেলের পানি দীর্ঘ সময় থাকলে এর পুষ্টিগুণ ও স্বাদ কমে যেতে পারে, তাই সম্ভব হলে দ্রুত পান করা উচিত।

একটা ডাবে কত ক্যালোরি আছে?

 ডাবের পানি অত্যন্ত কম ক্যালোরি যুক্ত করে। এক গ্লাস (প্রায় ২৫০ মিলিলিটার) ডাবের পানিতে প্রায়  ৫০-৬০ গ্রাম ক্যালোরি থাকে, যা শরীরের জন্য একদম সহনীয় ও স্বাস্থ্যকর পানীয়। 

ডাবের পানি পানের ফলে শরীর সতেজ থাকে, কারণ এতে প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট আছে, যা শরীরের ঘামের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া খনিজের পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। ডাবের পানিতে চর্বির পরিমাণ অত্যন্ত কম , তাই যারা ডায়েট করছেন বা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এটি আদর্শ একটি পানীয়। 

ডাবের সাদা অংশ বা গুদির ক্যালোরি অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডাবের গুদিতে প্রায় ১৫০-২০০ ক্যালোরি রয়েছে। ডাবের গুদিতে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিন রয়েছে, যা শরীরের জন্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। 

অতএব, ডাবের বিভিন্ন জাত রয়েছে, তাই  ক্যালোরির পরিমাণ ও কম বেশি হতে পারে। সাধারণত, একটি বড় ডাব থেকে পাওয়া পানি (প্রায় ৩০০-৪০০ মিলিলিটার) যার গড় ক্যালোরি পরিমাণ  প্রায় ৫০-৭০। আর ডাবের গুদির ১০০ গ্রাম প্রায় ১৫০-২০০ ক্যালোরির সমান।  

ডাব খাওয়ার মাধ্যমে শরীরকে প্রাকৃতিক শক্তি প্রদান করা যায় এবং এটি শরীরের পানি ভারসাম্য রক্ষা করতে ভূমিকা রাখে । অতএব, গরমকালে ডাবের পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। 

তবে ডাবের গুদির উচ্চ ক্যালোরির কারণে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

শেষ কথা

ডাবের পানি পান করা অবশ্যই স্বাস্থ্যকর একটি অভ্যাস, তবে এটি গ্রহণের সময় স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, দৈনিক চাহিদা ও পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন থাকা অপরিহার্য। যথাযথ ও সঠিক সময়ে ডাবের পানি পান করলে এটি শরীর ও মনের জন্য দুটোরই উপকারে আসে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url