মাথাব্যথার কারণ ও প্রতিকারঃ প্রতিদিন মাথা ব্যথার সমাধান
ভূমিকাঃ
মাথাব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। যদিও অনেক সময় এটি তুচ্ছ মনে হয়, এর পিছনে শারীরিক এবং মানসিক নানা জটিলতা লুকিয়ে আছে।
টেনশন, ঘুমের অভাব, চোখের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, পানিশূন্যতা বা মাইগ্রেন এসবই মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
কখনো কখনো এটি সাময়িক কষ্ট দেয়, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা আমাদের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকে বিঘ্নিত করে।
তাই মাথাব্যথার মূল কারণ চিহ্নিত করা এবং যথাসময়ে চিকিৎসা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সূচীপত্র
মাথা ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
মাথা ব্যথা হলো একটি প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা, যা কখনো মৃদু আবার কখনো তীব্র হতে পারে। এর পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ।
সবচেয়ে বেশি পরিচিত হচ্ছে টেনশন হেডেক, যা সাধারণত মানসিক চাপ, উদ্বেগ, ক্লান্তি, বা ঘুমের অভাবের ফলে হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, মাইগ্রেন একটি জটিল মাথা ব্যথা, যা সাধারণত মাথার এক পাশে তীব্রভাবে অনুভূত হয় এবং সঙ্গে থাকে বমি ভাব, আলো বা শব্দে অস্বস্তি।
সাইনাসের প্রদাহ, চোখের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, পানিশূন্যতা, দীর্ঘ সময় মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার, এমনকি অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসও মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে।
প্রতিদিন মাথা ব্যথা করে কেন?
প্রতিদিন মাথা ব্যথা হওয়া কোনো সাধারণ ব্যাপার নয়। অনেকেই এটাকে হালকা মনে করেন, কিন্তু এর পেছনে অনেক শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা থাকতে পারে।
সাধারণত মাথা ব্যথা দুই ধরনের হয় প্রাথমিক (যেমন টেনশন হেডএক, মাইগ্রেন) এবং সেকেন্ডারি (যা অন্য কোনো রোগের কারণে ঘটে)।
প্রতিদিন মাথা ব্যথার কারণগুলো জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আমরা সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে পারি।
প্রথমত
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস হলো দৈনন্দিন মাথা ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ। অফিসের কাজের চাপ, পড়াশোনার চাপ বা ব্যক্তিগত দুশ্চিন্তা মাথার পেশীকে টানটান করে ফেলে, যার ফলে টেনশন হেডেক দেখা দেয়।
দ্বিতীয়ত
ঘুমের অভাব বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘুমও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে। পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুম না হলে আমাদের মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায় না, ফলে মাথা ভারী হয়ে যায় এবং ব্যথা অনুভূত হয়।
তৃতীয়ত
চোখের সমস্যা, যেমন চোখে পাওয়ার থাকা সত্ত্বেও চশমা ব্যবহার না করা বা দীর্ঘসময় কম্পিউটার ও মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা মাথা ব্যথার বড় কারণ। অনিয়মিত খাবার খাওয়া, ডিহাইড্রেশন বা শরীরে পানির অভাবও মাথা ব্যথাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এছাড়া, মাইগ্রেন একটি উল্লেখযোগ্য কারণ, যেখানে মাথার একপাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় এবং এর সাথে বমি বমি ভাব বা আলো-শব্দে সংবেদনশীলতা দেখা দেয়। প্রতিদিন যদি মাইগ্রেন হয়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
উচ্চ রক্তচাপ, সাইনাস ইনফেকশন, গলার হাড় বা মেরুদণ্ডের সমস্যা থেকেও মাথা ব্যথা হতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত কফি পান, ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবনও মাথা ব্যথাকে বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন মাথা ব্যথা হলে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি।
যেমন নিয়মিত ঘুমানো, পর্যাপ্ত পানি পান করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, স্ট্রেস কমানো এবং স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করা। হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়ামও বেশ উপকারি হতে পারে।
কিন্তু যদি মাথা ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ব্যথার ধরন হঠাৎ বদলে যায়, সঙ্গে মাথা ঘোরা, ঝাপসা দেখা, অসাড়তা বা বমি হয়, তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
তাই প্রতিদিনের মাথা ব্যথাকে উপেক্ষা না করে কারণ খুঁজে বের করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াই হলো একটি সচেতন ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়।
চোখের সমস্যার কারণে কি মাথা ব্যাথা হতে পারে?
হ্যাঁ, চোখের বিভিন্ন সমস্যা মাথাব্যথার জন্য একটি সাধারণ কারণ। আমাদের চোখ এবং মস্তিষ্কের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের সরাসরি স্নায়বিক সংযোগ।
তাই চোখে কোনও সমস্যা হলে সেটা মস্তিষ্কে চাপ তৈরি করে, যা মাথাব্যথার জন্ম দেয়।
অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না যে আমাদের মাথাব্যথার পেছনে আসলে চোখের সমস্যা রয়েছে।
যেমন, দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা (চশমার পাওয়ার পরিবর্তন), চোখে অস্বচ্ছতা বা ঝাপসা দেখা, অ্যাস্টিগম্যাটিজম বা দূর নিকট দেখার সমস্যা থাকলে আমাদের চোখকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। এই অতিরিক্ত চাপ থেকেই মাথাব্যথা হতে পারে।
বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভির স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার ফলে, কম আলোতে পড়াশোনা করার কারণে বা পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে চোখের ওপর চাপ পড়ে, যা মাথাব্যথা বাড়িয়ে দেয়।
চোখের সমস্যা থেকে সৃষ্ট মাথাব্যথার একটি বিশেষ লক্ষণ হলো, এটি সাধারণত চোখের চারপাশে, কপালের দু’পাশে বা মাথার সামনের দিকে বেশি অনুভূত হয়।
কখনও কখনও চোখ লাল হয়ে যাওয়া, শুষ্কতা, ঝাপসা দেখা বা চোখে জ্বালাপোড়া করার মতো উপসর্গও দেখা দেয়।
এ ধরনের সমস্যা এড়াতে নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করাতে হবে। সঠিক পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করা, কাজের মাঝে চোখকে বিশ্রাম দেওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়া খুবই জরুরি।
যদি মাথাব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা চোখের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য উপসর্গ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
মাথাব্যথার জন্য কোন ওষুধ ভালো?
মাথাব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি পরিচিত সমস্যা। অনেক সময় দেখা যায় অতিরিক্ত চাপ, দুশ্চিন্তা, চোখের সমস্যা, ঘুমের অভাব বা অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে মাথাব্যথা শুরু হয়।
মাথাব্যথার সময় প্রথমেই তার প্রকৃতি ও কারণ বোঝা জরুরি, কারণ ভেদে চিকিৎসা ভিন্ন হতে পারে।
সাধারণত, হালকা মাথাব্যথার জন্য প্যারাসিটামল সবচেয়ে নিরাপদ এবং জনপ্রিয় ওষুধ। এটি দ্রুত ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
কিন্তু যদি মাথাব্যথার সঙ্গে প্রদাহ বা টান জাতীয় ব্যথা থাকে, তাহলে আইবুপ্রোফেন বা নাপ্রোক্সেন কার্যকর হতে পারে।
আবার, মাইগ্রেনের মতো জটিল মাথাব্যথার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে বিশেষ ধরনের ওষুধ, যেমন ট্রিপটানস ব্যবহার করা হয়।
তবে, এসব ওষুধ নিজে থেকে না খেয়ে ডাক্তারদের নির্দেশনা অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
এছাড়া, কিছু ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে মাথাব্যথা কমানো সম্ভব। পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত পানি পান, অতিরিক্ত মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার কমানো এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করলে মাথাব্যথার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
যারা নিয়মিত মাথাব্যথায় ভোগেন, তাদের উচিত জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তন করা এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া।
চোখের কোন রোগের কারণে মাথা ব্যাথা হয়?
চোখ এবং মাথার মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। চোখের নানা ধরনের সমস্যার কারণে মাথাব্যথা হওয়াটা বেশ সাধারণ।
বিশেষ করে যে সব রোগ বা সমস্যা চোখের দৃষ্টিশক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, বা চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, সেগুলো মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নিচে কিছু সাধারণ চোখের সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, যেগুলোর কারণে মাথাব্যথা হতে পারে।
প্রথমতঃ
পাওয়ারজনিত সমস্যা যেমন মায়োপিয়া (কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখা যায় কিন্তু দূরের জিনিস ঝাপসা) এবং হাইপারমেট্রোপিয়া (দূরের জিনিস স্পষ্ট কিন্তু কাছের জিনিস ঝাপসা) বা অ্যাস্টিগমাটিজম।
এই অবস্থায় চোখকে জিনিসগুলো স্পষ্টভাবে দেখতে অনেক বেশি চেষ্টা করতে হয়, যার ফলে কপাল এবং চোখের চারপাশে চাপ পড়ে এবং মাথাব্যথা সৃষ্টি হয়।
দ্বিতীয়তঃ
গ্লুকোমা (Glaucoma) বা চোখের চাপ বেড়ে যাওয়া। এই রোগে চোখের ভিতরে চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যায়।
এতে চোখে ব্যথার পাশাপাশি মাথার একপাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে, কখনও কখনও বমি বোধও দেখা দেয়। এটি একটি গুরুতর রোগ এবং দৃষ্টিহানির ঝুঁকি বহন করে।
তৃতীয়তঃ
ক্যাটারাক্ট (Cataract) বা ছানি পড়া। ছানি পড়লে চোখে ঝাপসা দেখা দেয়, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ে এবং চোখ অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
চতুর্থতঃ
ড্রাই আই সিনড্রোম (Dry Eye Syndrome)। দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারে চোখ শুকিয়ে যায়, জ্বালা সৃষ্টি হয় এবং মাথাব্যথা শুরু হয়।
পঞ্চমতঃ
চোখে ইনফেকশন বা প্রদাহ (Conjunctivitis, Uveitis)। এই অবস্থায় চোখ লাল হয়ে যায়, জ্বালা করে এবং মাথার ভিতরে চাপ অনুভূত হতে পারে।
অন্যদিকে, দীর্ঘ সময় চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব, বা চোখের মাংসপেশির দুর্বলতা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। তাই চোখের সমস্যাগুলি কখনও অবহেলা করা উচিত নয়।
নিয়মিত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া, প্রয়োজনীয় চশমা ব্যবহার করা এবং চোখকে বিশ্রাম দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ মাঝে মাঝে চোখের সামান্য সমস্যা মাথাব্যথার মূল কারণ হতে পারে।
চোখের পিছনে মাথা ব্যথা দূর করার উপায়?
চোখের পিছনে মাথা ব্যথা অনেকের জন্য একটি পরিচিত সমস্যা। সাধারণত, দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে, চশমার পাওয়ার সঠিক না থাকার জন্য, চোখে অতিরিক্ত চাপ পড়ার জন্য অথবা মাইগ্রেন ও সাইনাসের মতো সমস্যার জন্য এমন ব্যথা হতে পারে।
অনেক সময় এই ব্যথাটি হালকা মনে হলেও, অবহেলা করলে চোখ ও মাথার স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
তাই সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। প্রথম ধাপ হিসেবে চোখকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যারা দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করেন, তাদের প্রতি ২০ মিনিট পর অন্তত ২০ সেকেন্ডের জন্য দূরে তাকানোর চেষ্টা করা উচিত। একে বলা হয় "২০-২০-২০ রুল"। এটি চোখের ওপর চাপ কমায়।
যদি আপনি চশমা ব্যবহার করেন, তবে নিশ্চিত হতে হবে যে তার পাওয়ার সঠিক। ভুল পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করলে চোখে চাপ পড়তে পারে এবং এর ফলে মাথার পিছনে ব্যথা হতে পারে। তাই বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করানো উচিত।
পর্যাপ্ত ঘুমও চোখ ও মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ঘুমের অভাব চোখের পিছনে ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো অপরিহার্য।
শরীরে পানির অভাব থাকলেও মাথা ব্যথা হতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। পাশাপাশি, অতিরিক্ত কফি বা চা পরিহার করা ভাল, কারণ এগুলো অনেক সময় ডিহাইড্রেশন বাড়িয়ে দেয়।
প্রয়োজনে চোখে ঠান্ডা পানি বা বরফের সেঁক দেওয়া যেতে পারে, যা সাময়িকভাবে আরাম দেয়। এছাড়া, হালকা ব্যায়াম বা চোখের ব্যায়ামও উপকারী হতে পারে।
তবে, যদি চোখের পিছনে মাথা ব্যথা বারবার হয়, এবং সঙ্গে যদি চোখ লাল হওয়া, ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব থাকে, তবে দেরি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সংক্ষেপে, চোখের পিছনের মাথা ব্যথা এড়াতে চোখকে বিশ্রাম দেওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম, সঠিক পাওয়ারের চশমা ব্যবহার, পানি পান এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সেরা উপায়।
মাথা ও চোখের একপাশে ব্যথা হলে কি হয়?
মাথা এবং চোখের একপাশের ব্যথা অনেকের কাছে সাধারণ একটি সমস্যা মনে হতে পারে, তবে এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।
সাধারণত, এই ধরণের ব্যথাকে অনেক সময় মাইগ্রেন বা ক্লাস্টার হেডএক বলে পরিচিত।
মাইগ্রেনের সময় মাথার একপাশে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়, যা প্রায়ই চোখ, কপাল অথবা কান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
এই ব্যথার সাথে আলো ও শব্দের প্রতি অস্বস্তি, বমি ভাব, এমনকি মাথা ঘোরা মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
কিছু লোকের ক্ষেত্রে চোখ লাল হয়ে যায়, চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করে, এবং মাঝে মাঝে চোখ ভারী লাগতে পারে।
চোখের একপাশের ব্যথার আরেকটি কারণ হতে পারে চোখের অতিরিক্ত চাপ অথবা দৃষ্টিশক্তির সমস্যা।
যদি কারো চশমার পাওয়ার পরিবর্তন হয় বা দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়, তাহলে চোখের চারপাশে এবং মাথার একপাশে টান টান ব্যথা তৈরি হতে পারে।
এছাড়া, চোখের কিছু রোগ যেমন গ্লকোমা, যেখানে চোখের ভেতরের চাপ বেড়ে যায়, তা থেকেও হঠাৎ করে একপাশে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
ক্লাস্টার হেডএকও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ, যা সাধারণত চোখ ও কপালের একপাশে অল্প সময়ের মধ্যে শুরু হয় এবং কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে বারবার ফিরে আসতে পারে।
এই ধরনের ব্যথা এতটাই তীব্র হতে পারে যে অনেকে একে সুইসাইড হেডএক বলে থাকে। তবে, এই ধরনের ব্যথাকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।
বারবার মাথা এবং চোখের একপাশে ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে, যদি দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়, চোখ লাল থাকে, মাথা ঘুরতে থাকে অথবা বমি বমি ভাব দেখা দেয়, তখন দেরি না করে চোখ ও স্নায়ুর ডাক্তার দেখানো উচিত।
সাময়িকভাবে পর্যাপ্ত ঘুম, চোখকে বিশ্রাম দেওয়া, মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহারে বিরতি দেওয়া এবং প্রচুর পানি পান করা উপকারে আসতে পারে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সমস্যার মূল কারণ নির্ণয় করা। তাই মাথা এবং চোখের একপাশে ব্যথা হলে এটিকে হালকাভাবে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা করা উচিত।
কি করলে মাথা ব্যথা কমবে?
মাথা ব্যথা যদিও একটি সাধারণ সমস্যা, তা সত্ত্বেও এটি অনেক সময় খুব অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। তবে মাথা ব্যথা কমানোর জন্য কিছু সহজ ও কার্যকর পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে।
প্রথমেই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ঘুমের অভাব বা অনিয়মিত ঘুম মাথা ব্যথার প্রধান কারণগুলোর একটি। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ভালোভাবে ঘুমানো খুবই উপকারী।
এছাড়া, পর্যাপ্ত পানি পান করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে মাথা ব্যথা বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করতে হবে।
- দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখে এবং মাথায় চাপ পড়ে। তাই কাজের মাঝে বিরতি নেওয়া এবং চোখকে বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন।
- মানসিক চাপ বা টেনশনও মাথা ব্যথার একটি অন্যতম কারণ। তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, যোগব্যায়াম বা হালকা মেডিটেশন করা যেতে পারে।
- কফি বা চা সামান্য পরিমাণে খেলে কিছু সময়ের জন্য টেনশন টাইপ মাথা ব্যথা কমে যেতে পারে, তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা উচিত।
- যদি মাথা ব্যথা ঘন ঘন হয় বা খুব তীব্র হয়ে থাকে, তবে এটি মাইগ্রেন, সাইনাস বা অন্য কোন জটিল সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব প্রয়োজন।
সুতরাং, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পানি পান, চাপ কমানো এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া এই নিয়মগুলো মেনে চললে মাথা ব্যথা অনেকটাই কমানো সম্ভব।
শেষ কথা
মাথাব্যথা সাধারণ কোনো অস্বস্তির প্রতীক নয়; বরং এটি অনেক সময় ভেতরে চাপা থাকা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার সংকেত হতে পারে।
সুতরাং, নিয়মিত ঘুমানো, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা, মানসিক চাপ কমানো এবং চোখ ও শরীরকে যথেষ্ট বিশ্রাম দেওয়া এই অভ্যাসগুলো যদি গড়ে তোলা যায়, তাহলে মাথাব্যথার সম্ভাবনা অনেকটাই কমানো সম্ভব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url