রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর খাবার ও ফলঃ সম্পূর্ণ গাইড

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কী কী খাওয়া উচিত?

যখন রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যেতে শুরু করে, তখন এটি অ্যানিমিয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। এর ফলে শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যেতে থাকে। হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য আমাদের খাদ্যাভাসের কিছু পরিবর্তন করা জরুরি। 

লৌহ জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়া দরকার। লৌহ জাতীয় খাবার হিমোগ্লোবিন তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, মাছ, ডিম, পালং শাক, বিটরুট, লাল মাংস, এবং শিম খাওয়া যেতে পারে।

এছাড়াও, ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। ভিটামিন সি লৌহের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই কমলা, আমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, এবং টমেটো বেশি করে খাওয়া উচিত।

ব্রেড, চাল, ডাল, বাদাম এবং গমের মতো ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারও রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষভাবে, ফলিক অ্যাসিড রক্তের কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

এছাড়া, দুধ এবং দুধজাত পণ্য থেকে প্রোটিন গ্রহণ করা প্রয়োজন, কারণ প্রোটিন রক্তের সেল গঠন করে। সর্বোপরি, পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে এবং চা-কফি কম খেতে হবে, কারণ এতে লৌহ শোষণ কমে যায়। 

সুতরাং, হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য লৌহ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেতে হবে। এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

মানবদেহে রক্ত তৈরি করে কোন খাবার?

মানব শরীরে রক্ত তৈরি ও হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবার খাওয়া প্রয়োজন। প্রথমেই বলতে হয়, লৌহ সমৃদ্ধ খাবারের কথা। যেমন, পালং শাক, লাল মাংস, মাছ, ডিম এবং ডাল এসব খাবার রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। 

কারণ, হিমোগ্লোবিন মূলত আয়রনের মাধ্যমে তৈরি হয়ে থাকে। তাই, আয়রনযুক্ত খাবার নিয়মিত খেলে রক্তের পরিমাণ বাড়তে থাকে। 

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন, আমলকী, লেবু, কমলা, এবং স্ট্রবেরি রক্তের আয়রন এর পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করে। এর ফলে, আয়রনের অভাব থেকে রক্ত কমে যাওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। 

এছাড়াও, ভিটামিন বি১২ ও ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, দুধ, মাংস, এবং সবুজ শাক-সবজি রক্ত  বাড়ানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

এরপর আছে  প্রাকৃতিক মধু, বিটরুট, বাদাম এবং সয়াবিন। বিটরুট রক্ত বৃদ্ধিতে ও শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে। বাদাম ও সয়াবিন প্রোটিন এবং আয়রনের দারুণ উৎস।

অতএব, যদি আপনি রক্ত বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে অবশ্যই লৌহ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। 

এছাড়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং সুস্থ জীবনযাপনও রক্ত সৃষ্টিতে সহায়ক। এই খাদ্যাভ্যাস রক্ত কম থাকার সমস্যা দূর করে এবং শরীরকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখে।

আপেল খেলে কি হিমোগ্লোবিন বাড়ে?

আপেল খেলে কি হিমোগ্লোবিন বাড়ে, এ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। আসলে আপেলের মধ্যে কিছু পুষ্টি উপাদান আছে যা রক্তের জন্য অনেক উপকারী হলেও, হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য আপেল একার পক্ষে সম্ভব নয়। 

আপেলে অধিক পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। আয়রন হল হিমোগ্লোবিন তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। 

তাই যদি আপেলের সঙ্গে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যায়, তবে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির জন্য তা কার্যকরী হতে পারে।

এছাড়া, আপেলের ভেতরে ফোলেট, পটাসিয়াম এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও আছে, যা রক্তের গুনগত মান ভালো রাখতে সাহায্য করে। 

নিয়মিত আপেল খেলে রক্তনালী সুস্থ থাকে, রক্ত প্রবাহ ভালো হয় এবং শরীরের অক্সিজেন ক্ষমতা বাড়ে। 

তবে, হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য শুধু আপেলের উপর নির্ভর না করে লাল মাংস, পালং শাক, ডাল, বাদাম ও অন্যান্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবারও খাওয়া প্রয়োজন। 

সুতরাং, আপেল খেলে সরাসরি হিমোগ্লোবিন বাড়ে না, তবে এটি আয়রনের মাত্রা বাড়িয়ে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। 

একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবারের অংশ হিসেবে আপেল গ্রহণ করলে রক্তের মান ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

তাই হিমোগ্লোবিন বাড়াতে আপেল খাওয়া ভালো, তবে এটিকে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে মিলিয়ে প্রতিদিন খেতে হবে।

কোন ফল খেলে রক্ত বাড়ে?

রক্ত বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের খাবারের তালিকায় কিছু নির্দিষ্ট ফল রাখা প্রয়োজন, যেগুলোতে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। 

এগুলো খেলে রক্তের হিমোগ্লোবিন এবং লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতে সহায়ক। সর্বাধিক পরিচিত ফলগুলোর মধ্যে আপেল, কমলা, আনারস, আঙুর, পেঁপে এবং স্ট্রবেরি ব্যাপক পরিচিত।

আপেল খেলে রক্ত বাড়ে, কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। 

ভিটামিন সি আয়রনের শোষণ বাড়ায়, তাই আপেলের সঙ্গে কমলা বা লেবুর রস খেলে আরও দ্রুত কার্যকর হয়। 

আনারসেও রয়েছে আয়রনের ভালো উৎস, যা রক্তের ঘনত্ব বাড়ায়। পেঁপে ও আঙুরেও প্রচুর আয়রন রয়েছে, যা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে অধিক কার্যকর। 

স্ট্রবেরিতে ভিটামিন সি থাকে, যা আয়রনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তের কোষগুলোর গঠন উন্নত করে থাকে। 

শুধু আয়রণ জাতীয় ফল খাওয়া যথেষ্ট নয়; আমাদের শরীরে আয়রনের কার্যকর শোষণের জন্য ভিটামিন সি এবং ফোলেটেরও প্রয়োজন। 

তাই বিভিন্ন ধরনের ফল একসাথে খাওয়া রক্ত বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক  ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত এই ফলগুলো খেলে রক্তের ঘাটতি কমে এবং শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।

সুতরাং, রক্ত বাড়ানোর জন্য আপেল, কমলা, আনারস, পেঁপে, আঙুর এবং স্ট্রবেরির মতো ফলগুলোকে প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখা প্রয়োজন। এছাড়া ফলের সঙ্গে শাকসবজি ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। 

কি পান করলে রক্ত বাড়ে?

রক্ত বৃদ্ধির জন্য এমন কিছু পানীয় খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা শরীরে যথেষ্ট আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন সি সরবরাহ করতে পারে। এই উপাদানগুলো রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে।

আয়রন সমৃদ্ধ পানীয়গুলোর মধ্যে বিটরুটের জুস অন্যতম। বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ফোলেট রয়েছে, যা রক্ত বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালনকেও উন্নত করে থাকে। 

ডালিমের রস আসলে রক্তের বৃদ্ধির জন্য খুবই কার্যকর একটি ফল। ডালিমে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্ত তৈরির প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে। এছাড়া, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যধিক সাহায্য করে। 

পাতাযুক্ত সবজির জুস, যেমন পালং শাক, লাল শাক, আয়রন ও ফোলেটের দারুণ উৎস। এগুলো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন কমলা, লেবু বা আনারসের সাথে মিশিয়ে খেলে আয়রনের মাত্রা আরও বেশি বেড়ে যায়। 

গাজরের রসও অনেক ভালো, কারণ এতে ভিটামিন এ, সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রক্তের গুণগত মানকে উন্নত করে। 

এছাড়া, খেজুর, কিশমিশ এবং মোলাসেস (খেজুরের গুড়) দিয়ে তৈরি পানীয়ও আয়রনের দারুণ উৎস। 

কিন্তু শুধু পানীয় নয়, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত পানি পান করাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন এই ধরনের স্বাস্থ্যকর পানীয় গ্রহণ করলে প্রাকৃতিকভাবেই রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সুস্থ থাকে।

ডালিম খেলে কি হিমোগ্লোবিন বাড়ে?

হ্যাঁ, ডালিম খাওয়ার ফলে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। ডালিমে থাকা প্রচুর আয়রন, ভিটামিন সি, ফলেট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা কিনা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে খুবই কার্যকর। 

আয়রন হল হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আর ভিটামিন সি আয়রনের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে, ডালিম খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়ে এবং রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। 

যাদের হিমোগ্লোবিনের অধিক মাত্রায় কম, তারা নিয়মিত ডালিম খেলে আস্তে আস্তে রক্তের ঘাটতি পূরণ হতে থাকে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, কিশোরী এবং মাসিক চলাকালীন নারীদের জন্য ডালিম খুবই উপকারী একটি ফল, কারণ এই সময়ে শরীরে রক্তের চাহিদা বেশি হয়। 

এছাড়াও, ডালিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। ডালিম শুধু ফল হিসেবেই নয়, রস হিসেবেও খাওয়া যায়। 

সকালে খালি পেটে বা বিকেলের নাশতায় এক গ্লাস ডালিমের রস পান করলে শরীরে সতেজতা ফিরে আসে এবং রক্তের গুণও গত মান ভালো থাকে।

তবে হিমোগ্লোবিন দ্রুত বাড়ানোর জন্য শুধু ডালিম খাওয়ায় যথেষ্ট নয়, সাথে অন্যান্য আয়রন জাতীয় খাবার যেমন কলিজা, পালং শাক, মসুর ডাল ইত্যাদিও খাওয়া প্রয়োজন। 

ডালিম একটি প্রাকৃতিক এবং সুস্বাদু উপায় হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য, যা নিয়মিত খাবার তালিকায় রাখলে সুস্থ রক্ত এবং শক্তিশালী শরীর গঠনে সহায়ক হয়। 

শেষ কথা

যখন রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয়, তখন শুধুমাত্র ওষুধের উপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয়। খাদ্যাভ্যাসে সঠিক পরিবর্তন আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় লৌহ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করলে স্বাভাবিকভাবেই হিমোগ্লোবিন বাড়ে।

যেমনঃ পালং শাক, লাল মাংস, মাছ, ডিম, ডাল, ডালিম, বিটরুট, আপেল এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। এসব খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাও গুরুত্বপূর্ণ। চা ও কফি কম খাওয়ার চেষ্টা করুন, কারণ এগুলো আয়রন শোষণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url